১৭ রকম ভাবে এসএসসিতে দুর্নীতি !

১৭ রকম ভাবে এসএসসিতে দুর্নীতি ! কেউ দিয়েছেন সাদা খাতা , আবার কেউ নিয়েছেন শূন্যপদ !

১৭ রকম ভাবে
এসএসসিতে দুর্নীতি !

কেউ দিয়েছেন
সাদা খাতা !

আবার কেউ নিয়েছেন
অতিরিক্ত শূন্যপদ !

কোন কোন পদ অবলম্বন
করে দুর্নীতি হয়েছে !

সমস্তটাই ব্যাখ্যা করলেন
বিচারপতি দেবাংশু বসাক !

ভোটের আবহে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় পুরো বঙ্গবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য থেকে রাজনীতি স্তরে এই রায় ঘোষণা জোর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ থেকে এসএসসির সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই রায় ঘোষণার মাধ্যমেই ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঠিক কীভাবে দুর্নীতি করা হয়েছিল সেই বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মোট ১৭ টি উপায় দুর্নীতি ঘটানো হয়েছে বলেই দাবি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ শাব্বরের। দেখুন ঠিক কোন ১৭ টি উপায়ে দূর্নীতি ঘটানো হয়-

১) ওএম আর শিটের দায়িত্ব অন্যের কাঁধে তুলে দেওয়া:

স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজে ওএমআর ( omr ) শিট স্ক্যান না করে । নাইসা নামের সংস্থাকে এই কাজের বরাত দিয়েছিল। এই কাজের জন্য তাদের টেন্ডারও দেওয়া হয় । কিন্তু ভারতীয় সংবিধান অনুসারে এই কাজ করানো বেআইনি। এসএসসি ভারতীয় সংবিধানে ১৪ নম্বর এবং ১৬ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করে এমন কাজ করেছে।

২) হস্তান্তর :

প্রথমে এসএসসি নাইসা-কে omr শিট মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয় । কিন্তু নাইসা সে কাজ করে না । বরং সেই কাজের দায়িত্ব অন্য আরেক সংস্থার হাতে তুলে দেয়। এভাবেই একের পর এক দায়িত্ব হস্তান্তর হতে থাকে অন্য সংস্থার কাছে।

৩) টেন্ডার না পেয়ে কাজ :

এরপর যে বিষয়টি আপনাকে জানাচ্ছি সেটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নাইসা যে সংস্থাকে এই কাজটি করতে দিয়েছিল। সেই সংস্থাকে কিন্তু এই কাজটি করার দায়িত্ব দেয়নি এসএসসি। এমনকি টেন্ডারও পেয়েছিল না স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে। দায়িত্ব না পেয়েই এসএসসি দপ্তরে গিয়ে ওএমআর সিট স্ক্যান করে আসে সেই সংস্থা। প্রশ্ন এখানেই কিভাবে দায়িত্ব না পেয়ে, সরকারের আদেশ না পেয়ে সরকারি অফিসে গিয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা যায়। এখানেই বোঝা যাচ্ছে পুরোপুরি অবৈধভাবে এই কাজ করানো হয়েছে।

৪) ওএমআর শিটের আসল কপি নষ্ট :

যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ও এম আর শিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি এসএসসি পরীক্ষাতেও এই ওএমআর শিট বিশাল ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার ওএমআর শিট এসএসসি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই কপি নষ্ট করলেও এসএসসির মূল সার্ভারে মিরর ইমেজ সংরক্ষণ করে রাখা হয় । এই মিরর ইমেজের মাধ্যমে পরবর্তীকালে কোন অসুবিধা হলে। তা সহজেই সমাধান করা যায়। কিন্তু এসএসসির সার্ভারেও কোন কপি ছিল না ।

৫) এসএসসি সার্ভারে মিসিং ইমেজ :

এসএসসি সার্ভারে সর্বদা সবকিছু আলাদা করে আরো এক কপি তুলে রাখা হয়। সেটা পরীক্ষা সংক্রান্ত হোক কিংবা কোন দরকারি কাগজপত্র। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করতে নেমে সিবিআইরা এসএসসির সার্ভার থেকে ওএমআর শিটস স্ক্যান করা মিরর ইমেজ খুঁজে পাননি। আর এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড়সড় জালিয়াতি করা হয়েছে।

৬) মিরর ইমেজ নিয়ে বড়সড় দাবি সিবিআইদের :

সিবিআইদের দাবি, ও এম আর শিটের কোনো মিরর ইমেজ সংরক্ষন করেনি এসএসসি। তারা বিষয়টিকে এমনভাবে সাজিয়েছে যাতে করে কোনো কিছুর প্রমাণ না থাকে। তার জন্য আসল কপিকে নষ্ট তো করেছে,,,,,,,,,, সেই সাথে কোনো স্ক্যান না করেই ওএমআর শিট গুলি মুছে ফেলা হয়েছে । এতে করে কে কত পেয়েছে সেই বিষয়ে কোনোভাবেই জানা যাবে না।

৭) এসএসসি তরফে দাবি:

স্কুল সার্ভিস কমিশনের মতে তারা ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সমস্ত চাকরি প্রার্থীদের ওএমআর শিট দেখিয়েছিল। আর যে সমস্ত ওএমআর দেখানো হয়েছিল সেগুলি সমস্তই স্ক্যান করা। সেই সময় তাদের নিজস্ব সার্ভারে সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের ডেটা তুলে রাখা ছিল। তদন্তের সময় সেই ডেটাগুলি সিবিআইদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

৮) অতিরিক্ত শূন্য পদ :

শুনলে অবাক হবেন, স্কুল শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যতগুলো শূন্য পদের ঘোষণা করা হয়েছিল । তার চেয়ে বেশি সংখ্যক প্রার্থী নিয়োগ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এসএসসির উপদেষ্টার মতে, তখন গ্রুপ সি , গ্রুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী এই চারটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে।

৯) প্যানেলের নাম নেই চাকরিপ্রার্থীর :

শুধু শূন্য পদই নয়, প্যানেলে নাম নেই এমন প্রার্থীদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ মেধাতালিকায় নাম নেই এমন প্রার্থীরাই সবার আগে চাকরি পেয়েছেন।

১০) সাদা খাতা জমা দিয়ে স্কুল টিচার :

যেখানে একটি চাকরি পাওয়ার জন্য চাকরিপ্রার্থীরা দিনের পর দিন রাতের পর রাত শুধু লেগে থাকে পড়ার পিছনে। তারপরও দিনশেষে ফিরে আসতে হয় খালি হাতে । সেখানে যারা পরীক্ষার খাতায় কিছুটি লিখতে পারেনি , পেজের পেজ কোনো কালির ছাপ টুকু নেই । তারাই চাকরীপ্রার্থী তালিকায় সবার আগে । সাদাখাতা জমা দেওয়া সত্বেও চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। আর অন্যদিকে পরীক্ষায় সব উত্তর দিয়েও চাকরি পাননি মেধাবি প্রার্থীরা।

১১) মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে :

যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হলে । তালিকা অনুযায়ী তাদের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে। তারা এত সময় অব্দি আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু এসএসসি এক্ষেত্রে এর উল্টো কাজ করেছে। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে তারপরও একের পর এক চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দিয়েছেন। আর এমন কাজ আসলেই বেআইনি।

১২) কম নাম্বার পেয়ে চাকরি :

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে দেখা গিয়েছে, যারা বেশি নাম্বার পেয়েছে তারা অগ্রাধিকার পায়নি। উল্টে যারা একেবারেই অযোগ্য পরীক্ষার খাতায় নাম্বার নেই বললেই চলে তারাই আগে চাকরি পেয়েছেন। আর এমনটাই জানা গিয়েছে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে।

১৩) মেধাতালিকা অপ্রকাশ :

জানা গিয়েছে এসএসসি সেই সময় কোন রকমের মেধালিকা প্রকাশ করেনি। মেধা তালিকা প্রকাশ না করেই তারা এসএসসির জন্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করেছেন। আর এই প্রকাশ না করার জন্যই কে আদৌ যোগ্য কিংবা যোগ্য নয় সে সম্বন্ধেও জানা যায়নি।

১৪) প্যানেলের মেয়াদ শেষেও কাউন্সিলিং :

এরপরের যে দুর্নীতি করা হয়েছে সেটি হল, প্যানেলের মেয়াদ শেষ কিন্তু এসএসসি কর্তৃপক্ষের কর্তৃক কাউন্সিলিং চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।

১৫) অস্পষ্ট অবদান:

এই এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কজন বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছে এবং কতজনকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে কোথাও না কোথাও গিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং রাজ্য সরকার জড়িত রয়েছে । কিন্তু ঠিক কতটা অবদান রয়েছে কিংবা নেই সেখানে রয়েছে বিস্তর ধোঁয়াশা।

১৬) সুপার নিউমেরিকপোস্ট :

বেআইনিভাবে নিয়োগের বিষয়টি লুকিয়ে যাওয়ার জন্য এসএসসির তরফে সুপার নিউমেরিক পোস্ট আবেদন চালু করা হয়। এই পোস্টের মাধ্যমে পুরো দুর্নীতির নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে ধামাচাপা পড়ে যায় তার জন্য এই পন্থা অবলম্বন।

১৭) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও নিয়ম মানা হয়নি :

গ্রুপসি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনরকম নিয়ম মানা হয়নি। একজন শিক্ষক হতে গেলে যেখানে প্রয়োজন লিখিত পরীক্ষা মৌখিক পরীক্ষা সহ একাধিক পরীক্ষা। সেখানে কোন রকম নিয়ম ছাড়াই একেবারে সরাসরি শিক্ষকের পদে নিয়োগ করেন কমিশন।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *