রামচন্দ্র কিভাবে মারা গিয়েছিলেন?
জানেন?
কীভাবে শ্রী রামচন্দ্রের
মৃত্যু হয়েছিল?
ভগবান হয়েও কেন
মরতে হলো রামকে?
কোন ভুলের জন্য?
কোন অভিশাপের জন্য?
রঘুপতিকে দুনিয়া ছাড়তে হয়েছিল?
কি হতো?
যদি তিনি আজও বেঁচে থাকতেন?
পৃথিবীতে অধর্মের বিনাশ ঘটাতে, যুগে যুগে এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন ভগবান বিষ্ণু। কখনো কৃষ্ণ রূপে কখনো নৃসিংহ রূপে আবার কখনো পরশুরাম রুপে। তেমনি ত্রেতা যুগে ন্যায়ের দাতা হিসেবে রাম অবতারে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণু। রাম রাবণের যুদ্ধ থেকে শুরু করে সীতা হরণ সবই রামায়ণের পাতায় পাতায় বর্ণিত রয়েছে। আজও সকল হিন্দুদের ঘরে পূজিত হন পুরুষোত্তম রাম। রাম রূপে পৃথিবীতে আসার পর থেকেই তিনি একের পর এক সংগ্রাম করে গেছেন। জন্মের পর থেকেই একের পর কঠোর পরিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন । এমনকি শেষ জীবনে এসেও তিনি সুখ পাননি। মৃত্যুর সময়ও সহ্য করতে হয়েছিল অসহ্য যন্ত্রণা। অনেকেই রামের জন্ম কাল থেকে শুরু করে সীতার সাথে বনবাস সব কাহিনী জানলেও,,,,,,,, রাম কিভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। রামের মৃত্যু ঘিরে রয়েছে এক বেদনাদায়ক কাহিনী। যা শুনলে আপনার চোখে জল চলে আসবে ।
রামের এই মৃত্যু কাহিনী লেখা আছে পদ্মপুরাণে।
যশোরথ পুত্র এবং অযোধ্যার রাজা রাম দীর্ঘ ১৪ বছর বনবাস কাটিয়ে ফিরে এসেছিলেন অযোধ্যায়। এরপর টানা ১১ হাজার বছর ধরে তিনি এই অযোধ্যায় রাজত্ব করেন। একে একে পৃথিবীর সমস্ত পাপ মুছে দিতে থাকেন । সেই সাথে অযোধ্যার মত বড় সাম্রাজ্য নিজের একা হাতে সামলেছেন। এমনকি নিজেদের ভাইদের , পুত্রদের হাতে একে একে দায়িত্ব তুলে দিতে থাকেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সেই সময় সীতাও মর্ত্য ছেড়ে বৈকুন্ঠে ফিরে গিয়েছিলেন। আর এইসময়টা রাম তাঁর স্ত্রীকে ছাড়া একা একা কাটিয়েছেন এই পৃথিবীতে। সীতার চলে যাওয়া তিনি মেনে নিতে পারেন নি । ধীরে ধীরে তিনি দুর্বল হয়ে পড়তে থাকেন। একসময় রামের মনে হয় তাঁর এই পৃথিবীতে সব কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে । এবার এই ধরাধাম থেকে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু সেইসময় হঠাৎই একজন ঋষি রামের সাথে দেখা করতে আসেন। ঋষি বলেন, তিনি একান্তে রামের সাথে কথা বলতে চান । রামও ঋষির এই আদেশ মেনে নিয়েছিলেন । তিনি তার বিশ্বস্ত ভাই লক্ষণকে কক্ষের বাইরে পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেন। আর সেই সাথে বলে দেন এই কক্ষের ভিতর যেন কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়। কেউ যদি এই আদেশ অমান্য করে তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। লক্ষণও রামের কথা মত কক্ষের বাইরে পাহারা দিতে শুরু করেন। এরপর যা ঘটে তা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। পদ্মপুরাণ অনুসারে, যে ঋষি রামের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি ছিলেন কাল দেব। স্বয়ং ব্রহ্মা তাকে পাঠিয়েছিলেন ! এই কথাটি বলতে যে, পৃথিবীতে রামের সময় ফুরিয়ে এসেছে এবং তিনি যে উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে এসেছিলেন সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে গিয়েছে। এখন তাকে বৈকুন্ঠে ফিরে যেতে হবে। আর এই সময় কক্ষের বাইরে উপস্থিত হন ঋষি দুর্বাসা ।তিনি রামের সাথে দেখা করবেন বলে দাবি করেন । কিন্তু লক্ষণ স্পষ্ট জানিয়ে দেন , যে এই সময় তার ভাই কারো সাথে দেখা করতে পারবে না। আর এই কথা শুনে ঋষি দুর্বাসার মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায় । তিনি বলেন তাকে দেখা করতে না দিলে রাম লক্ষণ সহ গোটা রঘুকুলকে অভিশাপ দেবেন । আর এই অভিশাপে অযোধ্যাবাসি ধ্বংস হয়ে যাবে । ঋষি দূর্বাসার এই হুমকি শুনে লক্ষণ কিছুটা ভয় পেয়ে যান। তিনি কি করবেন, না করবেন ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। অত:পর দাদাকে বাঁচাতে এবং গোটা রঘুকুলকে বাঁচাতে সেদিন তিনি বড় সিদ্ধান্ত নেন । দাদার আদেশ অমান্য করে তিনি সেই কক্ষে প্রবেশ করেন । লক্ষণের এহেন কাণ্ড দেখে রাম কিছুটা হতাশ হন । সেই সাথে ধর্মসংকটে পড়ে যান তিনি। একদিকে নিজের সন্তানসম ভাই আর অন্যদিকে তার নির্দেশবাণী সব মিলিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন । সেই সময় ঋষি বৈশিষ্ট্যের নির্দেশ অনুসারে, তিনি ভাইকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে রাম রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দেন । লক্ষণও সেই আদেশ মতো রাম রাজ্য ছেড়ে চলে যান । কিন্তু রাম ছাড়া লক্ষণ যে অচল। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। সরযূ নদীর তীরে গিয়ে তিনি নিজের দেহত্যাগ করেন। প্রথমে সীতা এরপর লক্ষণ একে একে সকলকে হারিয়ে রাম ভেঙে পড়েন। তখন তিনিও সিদ্ধান্ত নেন এখন তাকেও এই ধরিত্রী ত্যাগ করতে হবে। ছেলেদের সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে তিনি এই পৃথিবী ছাড়েন। সরযূ নদীর তীরে এসে নিজের মনুষ্য রূপ ত্যাগ করেন। মনুষ্য রূপ ত্যাগ করে ঠিক সেই সময় বিষ্ণুরূপে হাজির হন বৈকুন্ঠে । এভাবেই রামের মৃত্যু হয়।
Leave a Reply