কে এই হরিচাঁদ ঠাকুর?

জানেন? কে এই হরিচাঁদ ঠাকুর? মোদী – মমতা বার বার ছুটে আসেন এই ঠাকুরের কাছে, ভোট এলেই লুটিয়ে পড়েন এনার পায়ে

 

জানেন?

কে এই হরিচাঁদ ঠাকুর?

 

মোদী – মমতা বার বার

ছুটে আসেন এই ঠাকুরের কাছে!

 

ভোট এলেই এনার পায়ে

মাথায় ঠেকায়, বাংলার নেতা-মন্ত্রীরা!

 

কি এমন আছে হরিচাঁদ

ঠাকুরের কাছে?

 

এনার মাহাত্ম্যটাই বা কি?

 

হরিচাঁদ ঠাকুরের কথা বললে সবার প্রথমেই আসবে মতুয়াদের কথা! হরিচাঁদ ঠাকুর থেকেই এই মতুয়াদের উৎপত্তি। মতুয়া সম্প্রদায় ! মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা। পশ্চিমবঙ্গের বুকে সবচেয়ে আলোচিত একটি সম্প্রদায়। যাদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ ঠাকুর। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করছেন মতুয়া জাতির মানুষেরা। সনাতন হিন্দুদের কাছে  হরিচাঁদ ঠাকুর ভগবানতুল্য।  ভোট এলেই এই সম্প্রদায়কে নিয়ে চর্চা বেড়ে যায়। ভোট ব্যাঙ্কে ভোট বাড়ানোর জন্য এই সম্প্রদায়কে রাজনিতিবিদরা তুরুপের তাস করে থাকেন। তবে হরিচাঁদ ঠাকুর এইসব রাজনীতির উর্দ্ধে। ইনি অনুকুল ঠাকুর লোকনাথ বাবার মতন মানুষরূপী দেবতা। তবে এই দেবতাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে নানারকমের কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কিভাবে হরিচাঁদ ঠাকুরের উৎপত্তি ? কিভাবে তিনি বাংলার মানুষের কাছে আরাধ্য দেবতা হয়ে উঠলেন?  আজকের প্রতিবেদনে আপনাদের জানাতে চলেছি হরিচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া সম্প্রদায়ের যাবতীয় খুঁটিনাটি।

 

বর্তমানে বনগাঁর ঠাকুরনগরে হরিচাঁদ ঠাকুরের তীর্থস্থান। তবে গোড়ার দিকে এই তীর্থস্থান ছিল ওপার বাংলায়। হরি চাঁদ ঠাকুরের বাবা যশোবন্ত ঠাকুর ও মা অন্নপূর্ণা দেবী। তিনি ছিলেন নমঃশূদ্র পরিবারের সন্তান। হরি চাঁদ ঠাকুরের জন্ম ফরিদপুরে। ছোটবেলার অনেকটা সময় ফরিদপুরে কাটালেও………তাঁর বাবার ভিটে নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় অন্যত্র চলে যান। এরপর তিনি গোটা জীবনটাই কাটান ওরাকান্দিতে। হ্যাঁ আজ হয়তো সকলে ঠাকুরকে নিয়ে জয়জয়কার করেন। তবে একসময় এই মানুষটাকেই সমাজের উচ্চস্তরের মানুষের কাছে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। কারণ তিনি যে নমঃশূদ্র জাতির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে এই সম্প্রদায়কে অচ্ছুত বলে গন্য করা হয়। সমাজের কোনও স্তরে এদের জায়গা নেই। আর হরিচাঁদ ঠাকুরও এই সম্প্রদায় থেকেই উঠে এসেছেন। সুযোগ সুবিধা তো দূর সামান্য পড়াশোনার সুযোগ টুকু দেওয়া হয়নি। তবে তিনি নিজেকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছিলেন। মানবতার শিক্ষা , প্রকৃতি থেকে জ্ঞান , বাস্তব থেকে বিস্তর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। আর সেই শিক্ষাই তিনি সমাজের সকল স্তরের মানুষদের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন সকলের ঠাকুর।

মতুয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি কিভাবে ?

হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন প্রকৃত ঈশ্বর বিশ্বাসী। জাতি, ধর্ম এসবে বিশ্বাস করতেন না তিনি । নারী, পুরুষ, ব্রাহ্মন, শূদ্র সকলকেই সমান অধিকার দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করতেন। মূলত পৈতেধারি ব্রাহ্মনদের ভাবধারার বিরোধিতা করার জন্যই তিনি বিশেষ কিছু বাণী প্রচার করেন। সমাজে নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, অস্পৃশ্য মানুষগুলোর মধ্যে তাঁর এই বাণী পৌঁছে যেতে থাকে। ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে থাকেন অসংখ্য মানুষ। হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীরা ধীরে ধীরে তাঁর মতবাদকেই বিশ্বাস করতে থাকেন । আর এই ভাবেই হরিচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরেই এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বুকে কিভাবে এই মতুয়া সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটলো ?

হরি চাঁদ ঠাকুরের মতবাদ শুধু অধুনা বাংলাদেশেই নয় পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছে গিয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ কারণ। হরিচাঁদ ঠাকুরের পর এই সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর। তিনিও বাবার মতো এই দায়িত্ব সামলাতে থাকেন । গুরুচাঁদ ঠাকুরের মারা যাওয়ার পর এই দায়িত্ব এসে পড়ে তারই পুত্র প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের ওপর। সময়টা তখন উনবিংশ শতক, দেশে তখন চলছে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি। আর সেই সময় বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য লোক পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে । আর সেইসঙ্গে প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরও চলে আসেন এপার বাংলায় । এরপর এখানে এসে ঠাকুরনগরে গড়ে তোলেন হরিচাঁদ ঠাকুরের নতুন ধাম। সেই থেকেই বাংলাতেও বাস করতে শুরু করে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ।

কিন্তু একসময় যে হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর এই ধর্ম কর্মে  রাজনীতির জায়গা দিতেন না। আজ সেই রাজনীতি ঢুকে গেছে এই ধর্মীয় স্থানে । তাঁর কারণ , আজ ঠাকুরপরিবারের সদস্যই এই রাজনীতির সাথে যুক্ত । যার ফলে এই পীঠস্থান বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *