ভোজনরসিক বাঙালির খাওয়ার পাতে যতই হরেক রকমের মাছ-মাংস কিংবা সব্জি দিয়ে তৈরী বাহারি পদের রান্না থাকুক না কেন ডাল ছাড়া কিন্তু পেট ভরলেও মনে ভরে না! তাই রোজকার খাদ্য তালিকায় ডাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডালে থাকে প্রোটিন,ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজের বিরাট সমাহার। এমনিতে ডাল বিভিন্ন ধরনের হলেও মুগ ডাল এবং মসুর ডালই মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়। এই দুই ডালের মধ্যে যেমন অনেক মিল রয়েছে তেমনি রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।
মুগ ডাল হোক কিংবা মসুর ডাল এই দুই ডালই প্রোটিনের উৎস। জানা যায় প্রতি ১০০ গ্রাম মুগ ডালে ২৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে আর প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালে থাকে ২৫ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়া এই দুই ধরনের ডালই হল ভিটামিন,ফাইবার এবং খনিজের উৎস। একাধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই দুই ডালের মধ্যেই রয়েছে বেশ কিছু পার্থক্যও। এই দুই ডালে ফাইবার থাকলেও মুগ ডালে মসুর ডালের তুলনায় বেশি পরিমাণ ফাইবার থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম মুগ ডালে ফাইবার থাকে ১২ গ্রাম, আর প্রতি ১০০ গ্রাম মুসুর ডালে ফাইবারের পরিমাণ থাকে ৯ গ্রাম। খাবার হজমের জন্য ফাইবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই ফাইবার সমৃদ্ধ মুগ ডাল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে মুগ ডালের তুলনায় মসুর ডালে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে। যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই দুই ডালই মানুষের ওজন কমাতে এবং হৃদরোগের মতো ঝুঁকি এড়াতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া মুগ ডাল কোলেসিস্টোকাইনিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এই কোলেসিস্টোকাইনিন হরমোন পেটকে খালি করতে এবং শরীরের শক্তির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আর মুগ ডাল রক্তের শর্করা মাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে মসুর ডাল প্রোটিন এবং ফাইবারের উৎস তাই প্রোটিন বেশি পেশী গঠনে সাহায্য করে। আর ফাইবার হজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য আর চাহিদার উপর নির্ভর করেই এই দুই ধরনের ডাল নির্বাচন করতে পারেন যে কেউ। তবে যদি কেউ মনে করেন ওজন কমাবেন তাহলে মুগ ডাল তার জন্য অত্যন্ত উপকারী। মুগ ডালে ফাইবার বেশি থাকে যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই কেউ আয়রনের ঘাটতিতে ভুগলে তিনি নিয়মিত একবাটি সেদ্ধ মুসুর ডাল খেতে পারেন। মসুর ডালে থাকা আয়রন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কিংবা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে কেউ মুগ ডাল বা মসুর ডাল খেতে চাইলে তা সেদ্ধ করে খাওয়া ভালো। এতে ডালের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না। এছাড়া ডালের সাথে বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং খাবার যোগ করলেও ডালের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি বৃদ্ধি পায় স্বাদ।
Leave a Reply